নিজস্ব প্রতিনিধি, কুতুবদিয়া :: কুতুবদিয়া উপজেলা একটি অন্যতম অর্থকরী ফসলের নাম লবণ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সমুদ্রের লোনা পানির চেয়ে এ অঞ্চলে লোনা পানির ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। কক্সবাজারের সিংহভাগ লবণ উৎপাদিত হয় কুতুবদিয়াতে। লবণ উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পেলেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশায় এ দ্বীপের হাজারো চাষী পরিবার। জমিতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি জমিয়ে তাতে সূর্যের তাপ দিয়ে পানি শুকিয়ে তৈরি হয় লবণ। এখানেই প্রমাণিত লবণ চাষের সম্ভাবনা ব্যাপকতা। কিন্তু সম্ভাবনা থাকলে কী হবে! সম্ভাবনা বিকাশের উদ্যোগ তো নেই। যুগ যুগ ধরে অবহেলিত থেকেই যাচ্ছে লবণ শিল্প।
বিসিকের দেয়া তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে দেশে লবণের লক্ষ্যমাত্রা ৮১ হাজার ৫শত উৎপাদন হয়েছে। গত বছরের ২লাখ ৭ হাজার ৫শত উৎপাদন হয়েছিল। এ শিল্প ন্যায্যমূল্য কারনে অনিশ্চিতের দিকে যাচ্ছে লবণ চাষীরা।
চলতি মৌসুমে কুতুবদিয়ায় ৬ হাজার ৭শত ৯৮ একরের বেশি জমিতে লবণ উৎপাদনে ব্যস্ত চাষী।
তবে চাষীরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে মাঠ থেকে উঠে আসা লবণে দেশের চাহিদা পূরণ সম্ভব। কিন্তু এখন তাদের যতো ভয় লবণের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে।
উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের তবলরচরের বাসিন্দা লবণ চাষী ফরিদ বলেন, লবন যথেষ্ট পরিমাণ উৎপাদিত হচ্ছে কিন্তু দাম ভালো পাচ্ছি না। পানি ও জমিন এবং শ্রমিকদের খরচসহ মিলে আমরা পাই প্রতি কেজিতে ৫ টাকা। লবন বিক্রির হয় সাড়ে ৫ টাকা এতে আমাদের কিছুই করার থাকে না। সরকার ধান বা অন্য পণ্যের দাম নির্ধারিত করে দিচ্ছে লবণের দাম নির্ধারন করছে না। গত বছর এই লবণের মূল্য ছিল কেজিতে ৮/৯ টাকা। বর্তমানে সেই লবন প্রতি কেজিতে ৩/৪ টাকা কম দামে বিক্রি করে, কিভাবে চাষীরা জমির খরচ, শ্রমিক খরচ, পানি খরচ এবং পারিবারিক খরচ মিটিয়ে জীবন যাপন করবে?
চাষী সুজন জানান, প্রতি কানি জমির মালিক পাওনা ৪০ হাজার টাকা, পলিথিন ৫ হাজার, পানি উত্তোলন ৪ হাজার, শ্রমিক-কর্মচারী ২৭ হাজার ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক খরচ ৩ হাজার করে মোট ৭৯ হাজার খরচ হয়। তিন কানিতে ১জন শ্রমিক কাজ করে, উৎপাদিত লবন প্রতি কানিতে ২৭০ মণ বা ১০৮০ কেজি। যার বর্তমান বাজার দর ২০০ টাকা হলে কেজি প্রতি ৫টাকা দরের বিক্রি হয়। এতে চাষীদের লোকসানের পরিমাণ ২৫ হাজার টাকা। প্রতি বছর লবণের ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় থাকেন কুতুবদিয়ার উপকুলের চাষীরা। এ অবস্থায় ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে দাবি জানান লবণ চাষীরা।
লবণ ব্যবসায়ীরা জানান, অনেক আশায় বুক বেঁধেছিল উৎপাদিত লবণ বিক্রি করে খরচ জোগাবে। কিন্তু লবণ বিক্রি করতে না পেরে এখন চরম হতাশায় ভুগছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় চাষীরা লবণ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। হারিয়ে যাবে দেশীয় লবণ শিল্প। তাই এ শিল্পকে বাচাঁতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
পাঠকের মতামত: